বিশ্বকে আবারও বাকরুদ্ধ করে দিলো যে ছবি

তুরস্কের উপকূলে বালিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা আইলান কুর্দির কথা এখনও ভোলেনি বিশ্ব। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাঁচ বছর বয়সী এই শিশুর মরদেহ পড়ে থাকার ছবি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল।

এবার অভিবাসন প্রত্যাশী বাবা ও মেয়ের আরেকটি ছবি বিশ্বকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশী বাবা তার মেয়েকে নিয়ে নদী পার হওয়ার সময় ডুবে মারা যায়। বাবা ও ছোট শিশুর নিথর দেহ উপুড় হয়ে নদীর তীরে পানির মধ্যে পড়ে আছে।

মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা তাদের এই ছবি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর পরপরই এই ছবি বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে আরেকবার।

বিবিসি জানিয়েছে, নিহত আলবার্টো মার্টিনেজ (২৫) এল সলভাদরের বাসিন্দা। তিনি সোমবার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মেক্সিকান বর্ডার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আলবার্টো মার্টিনেজ রিও গ্রান্ডো নদী সাঁতরে তার স্ত্রীর কাছে আসছিলেন। এসময় তার ২৩ মাস বয়সী শিশু কন্যা ভ্যালেরিয়া তাকে দেখে পানিতে ঝাঁপ দেয়।

আলবার্টোর স্ত্রী তানিয়া লা জর্নাদা বলেন, চোখের সামনেই তিনি স্বামী ও বাচ্চাকে স্রোতে ডুবে যেতে দেখেছেন। পরে তাদের নিথর দেহ রিও গ্রান্ডে নদীর মেক্সিকোর মাতামোরোস অংশে ভেসে ওঠে।

শিশুটির গায়ে লাল রঙের প্যান্ট, পায়ে জুতা এবং বাবার ঘাড়ে একটি হাত তখনও জড়িয়ে রেখেছে শিশুটি।

মর্মস্পর্শী এই ছবিটি তুলেছেন মেক্সিকান ফটোগ্রাফার জুলিয়া লে ডাক। তিনি মেক্সিকান সংবাদপত্র লা জর্নাদায় লিখেছেন, মেয়েকে বাঁচাতে বাবা প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড স্রোতে তাদের এই করুণ পরিণতি হয়।

এ ঘটনার পর এল সালভাদরের সরকার সবাইকে ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে সতর্ক করেছেন।

অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে পলিসি আরো শক্তিশালী করার ফলে গত কয়েকদিনে সীমান্তে অন্তত প্রায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ২৮৩ জন অভিবাসন প্রত্যাশী নিহত হয়। কিন্তু মানবাধিকার সংঘটনগুলো বলছে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

অভিবাসন প্রত্যাশীরা বলছেন, হন্ডুরাস, গুয়েতামালা, এল সালভাদরের মতো দেশগুলোতে সহিংসতা ও দ্রারিদ্রের প্রকোপের কারণে তারা নিজদেশ ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে বিপদজনক পথ পাড়ি দিতে হয় সোমবারের হৃদয়বিদারক এই ছবিটিই তার প্রমাণ।