লালমোহনে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা

লালমোহন প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহনে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সাজানো নাটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চর লক্ষী গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডে ২২ জুলাই রাতে এ সাজানো নাটকীয় ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, চর লক্ষী গ্রামের হারুন ও আব্দুল হাই গংদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এলাকায় কয়েক দফা বিচার শালিসি হয়েছে। পুনরায় শালিসি বসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় হারুন তার প্রতিপক্ষ আব্দুল হাই ও অন্যান্যদের ফাঁসাতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ৪ সন্তানের জননীকে দিয়ে ধর্ষণের ও লুটের মিথ্যা নাটক সাজায় বলে অভিযোগ করেন আবদুল হাই গংরা।

এ ঘটনায় হারুনের দ্বিতীয় স্ত্রী মানসুরার সাথে কথা বলে জানা যায়, আমি এখানে থাকি না। আমার বাপের বাড়িতে থাকি। এটা আমার স্বামীর বাড়ি। এ বাড়িতে এসে আমি আমার দেবর আলামিনের ঘরে থাকি। আলামিন ও আমার স্বামী হারুন চরফ্যাশন কাজের সাইডে থাকে। রাতে আমি ও আমার ঝাঁ আসমা সন্তান সন্ততি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এই সুযোগে গভীর রাতে ঘরের পিছনের বেড়া ভেঙ্গে ৭/৮জন দুর্বৃত্ত ঘরে প্রবেশ করে। ঘরের বাতি বন্ধ ছিলো আমাকে ও আছমাকে মুখ বেধে ঘরের খুটির সাথে বেধে ফেলে এবং লুট করে। ঘরের ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে কাগজের নিচে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার মোবাইল নিয়ে যায় এবং ঘরের কাগজপত্র তছনছ করে।

হাত বাধা অবস্থায় অন্ধকারে জোরপূর্বক মানসুরাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন বলে জানান মানছুরা নিজেই।
তারা ২২ জুলাই রাতের ঘটনায় ২৪ ও ২৫ জুলাই সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন যারা এসেছেন তাদের কারও কাছে মানসুরা ও আসমা ধর্ষণের অভিযোগ করেনি এবং কারো নাম উল্লেখ করেনি। তারা আরো জানান মানছুরা হারুনের দ্বিতীয় স্ত্রী এর পূর্বে মানছুরার তিনটি বিয়ে হয় এবং আঃ হাই ও হারুন সম্পর্কে চাচা ভাতিজা বলে জানান স্থানীয়রা।

মৃত আঃ হাসেমের স্ত্রী রেনু জানান, রাতে তাদের চিৎকার শুনে আমি সেই বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরের ভেতর তারা একজন আরেকজনকে বাঁধতেছে। এছাড়া অন্যকিছু আমি দেখিনি।

ভুক্তভোগী আব্দুল হাই জানান, ২২ জুলাই সকাল থেকে হারুন বিভিন্ন লোকজন নিয়ে আমাদের গাছ কেটে নেয়া শুরু করে। আমি গাছ কাটায় বাধা দিলে তার সাথে আমার ঝগড়া হয়। আজ রাতেই সে আমাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।

লালমোহন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. রাসেলুর রহমান জানান, লালমোহন থানার পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এ বিষয়ে কোন পক্ষ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ঘটনার সাথে সাথে খবর পেয়ে লালমোহন থানার এসআই শহীদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি বলেন, ২২ জুলাই বুধবার দিনগত রাতে স্থানীয় মহিববুল্লা চৌকিদারের ফোন পেয়ে আমি এসআই মাসুদ ও ফোর্স নিয়ে তাদের বাড়িতে যাই। হারুনের মা আমাকে জানালেন, আব্দুল হাই লোকজন নিয়ে এসে বেড়া কেটে ঘরে ঢুকে আমার পুতের বউকে মারপিট করে, নগদ টাকা ও স্বর্ণের জিনিস নিয়ে গেছে।

লোক চিনতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে মানসুরা বললো, লাইটের আলোতে আব্দুল হাইকে চিনেছি। বয়স কত হবে জিজ্ঞেস করলে বলেন, আব্দুল হাইর বয়স ৫৫/৬০ বছর হবে। তখন আমি আমাদের সাথে থাকা চৌকিদার মহিবুল্লাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, আব্দুল হাইর বয়স ৩০/৩৫ বছর হবে। স্থানীয় লোকজন আমাদের জানালো হারুন ও আব্দুল হাই এর মধ্যে জমিজমা নিয়ে পূর্ব থেকে শত্রুতা আছে। সকালে নাকি হারুন গাছ কাটাইছে। এ নিয়ে দুইজনে বাড়াবাড়ি হয়েছে।

ধর্ষণের কোন অভিযোগ ওনারা তখন করছে কিনা জানতে চাইলে এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের বা অপ্রীতিকর কোন কথা তখন ওনারা কেউ আমাদের কাছে বলেনি। তাদের কথা শুনে পরে আমি তাদেরকে চিকিৎসা নিতে বলি এবং থানায় এসে অভিযোগ দিতে বলি। কিন্তু ওনারা কেউ থানায় আসেনি।