করোনা: দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে?

আব্দুর রহমান নোমান: করোনাভাইরাস বিশ্বের জন্য দিন দিনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এর ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। চীন কয়েকদিন আগে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হওয়ার ঘোষণা দিলেও এখন আবার দ্বিতীয় দফায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। সেখানে দেশের বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে।

চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের মুখপাত্র এক সাক্ষাৎকারে জানান: বাইরের দেশগুলো থেকে আসা ৬৯৩ জনের মাঝে তারা নতুন করে সংক্রমণ খুঁজে পেয়েছেন। ফলে বড় কোন বিপদের আশঙ্কাই করছেন তারা।

বিদেশ ফেরত এসব মানুষদের অধিকাংশই রাজধানী বেইজিং দিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন। ফলে বেইজিং বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান চীনা সরকারের মুখপাত্র জু হেজিয়াং। তিনি বলেন: থেমে গেছে ভেবে আমাদের বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে, এমন বলার সময় এখনও আসেনি।

বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের নিয়ে চীন কর্তৃপক্ষ খুবই উদ্বিগ্ন। বাইরে থেকে যারা নতুন এসেছেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে চীনের অনেক শহরে কড়া নিয়মকানুন জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে আছে। এ ছুটি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কায় ছুটি আরও বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও গণমাধ্যমকে বলেছেন: ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় ছুটি হয়তো বাড়তে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনও আমরা জানি না।’

এর আগে ২৩ মার্চ সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। এর মধ্যে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং পরের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পাঁচ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আর ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় মোট ১০ দিনের ছুটিতে সারা দেশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চীনে শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ প্রায় তিন মাস সময় পেয়েছিল। কিন্তু ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে লুকোচুরি করেছে। করোনাভাইরাসকে প্রথম দিকে তেমন কোনো পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। পরবর্তীতে এয়ারপোর্ট, সীমান্ত ও স্থলবন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার বসানো হলেও তা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘শুধু সরকার যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বিষয়টি এমন নয়। দেশের অধিকাংশ জনসাধারণ একে পাত্তা দেয়নি। মুসলমানদের এ রোগ হবে না, কিংবা এটা বিধর্মীদের জন্য গজব; ইত্যাদি বিশ্বাস থেকে তারাও তেমন পাত্তা দেয়নি করোনাকে। এটাই বাংলাদেশের জন্য দুঃসবাদ বয়ে এনেছে।’

ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞানের এই শিক্ষক বলেন, ‘করোনার মতো দুযোর্গ মোকাবেলায় সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও শুরু থেকে সমন্বয় বা গুরুত্ব ছিল না। একাধিক মন্ত্রী সক্ষমতার গল্প শোনালেও এখন দেখা যাচ্ছে প্রস্তুতি তেমন নেই। হাসপাতাল থেকে শুরু করে ওষুধ, মাস্ক, ডাক্তারদের সুরক্ষা যন্ত্রপাতি, যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই অভাব। শুরু থেকে সত্যিকারের প্রস্তুতি নিলে এমনটা হতো না। এখন অবশ্য সক্ষমতা বেড়েছে। এটা আশার খবর।’

তিনি জানান, ‘দেশে করোনার ফার্স্ট পিরিয়ড অর্থাৎ শনাক্তের প্রথম ১৪ দিন শেষ হয়েছে। এখন শুরু হবে ডেঞ্জার পিরিয়ড। ইটালিসহ অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই সময় থেকেই মূল বিপদ শুরু হয়। তাই এ মুহূর্তে ঘরে থাকা এবং নিয়ম মানার কোনো বিকল্প নেই। এ সময়টা যদি আমরা ভালোভাবে পার করতে না পারি, তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপদ। আর যদি ঘরে থেকে নিয়ম মেনে থাকতে পারি, সরকারও যদি যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে মোকাবেলা করতে পারে, তাহলে আমাদের জন্য সেটা হবে সুখবর।

চীনের উহান থেকেই সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। গেল কয়েক মাসে প্রায় ৩৪০০ মানুষ এই ভাইরাসে মারা যায়। দেশটির মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ৪৭০।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪৯ জন। শনাক্ত কম হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয় বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।