চরফ্যাশনে সেই জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন

ফাইল ছবি

চরফ্যাশনে গত ৮ এপ্রিল একটি জঙ্গলে আগুনে পোড়ানো মাথাবিহীন যে দুটি লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেই জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির টাকা চাইতে গিয়ে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার জানান, ভোলা জেলার চরফ্যাসন থানাধীন আসলামপুর ইউনিয়নের সুন্দরী ব্রীজের পাশে একটি জঙ্গলে আগুনে পুড়ানো মাথাবিহীন দুটি লাশ পাওয়া যায়। জঙ্গলটি নির্জন স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এবং আশেপাশে কোন বসতি না থাকায় এটি ভূতের বাড়ি বলে স্থানীয় জনগনের নিকট পরিচিত। একজন কৃষক ঐদিন দুপুরের দিকে জঙ্গলে প্রবেশ করলে লাশ দুটি তার নজরে আসে। খবর পেয়ে চরফ্যাসন থানা পুলিশ সেখানে যায়। আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা করি এবং সেখানে উপস্থিত হয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করি। চরফ্যাসন সার্কেলের সিনিয়র এএসপি শেখ সাব্বির হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করে মূল রহস্য উদঘাটনের নির্দেশনা প্রদান করি।

পুলিশ সুপার আরও জানান, এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চরফ্যাসন থানার মামলা নং ০৪, তারিখ ০৯-০৪-২০২১খ্রিঃ, ধারা ৩০২/৩৪/২০১ পেনাল কোড রুজু করে। চরফ্যাসন সার্কেল এএসপির নেতৃত্বে চরফ্যাসন থানার টিম টানা দুই সপ্তাহ অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে। লাশ দুটি চরফ্যাসন পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ডের মৃত উপেন্দ্র চন্দ্র শীলের বড় ও মেঝ পুত্র তপন চন্দ্র শীল (৫৫) এবং দুলাল চন্দ্র শীল(৫২) দের বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহত তপন ও দুলাল দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাইরে ছিলেন। চরফ্যাসন পৈতৃক বাড়িতে থাকা ছোট ভাই ও মায়ের সাথে প্রায় তিন বছর তাদের যোগাযোগ ছিল না। গত বছর ডিসেম্বরে তপন ও দুলাল লুকিয়ে চরফ্যাসনে আসে এবং স্থানীয় মোঃ বেল্লাল (৩৩) এর নিকট পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রি করে দেয়। বেল্লাল তাদের নিকট হতে দলিল মূলে জমি ক্রয় করলেও জমির পুরো টাকা পরিশোধ করেননি। তপন ও দুলাল পাওনা টাকা নিয়ে বেল্লালকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। পাওনা টাকা যেন পরিশোধ করতে না হয় সে উদ্দেশ্যে গত ৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে বেল্লাল কৌশলে দুলাল ও তপনকে সুন্দরী ব্রীজ সংলগ্ন ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন আসামীর সহযোগিতায় তাদের জবাই করে হত্যা করে। নিহতদের বিচ্ছিন্ন মাথা আসামীরা তাদের বাড়ির পাশে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় এবং নিহতদের শরীর পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

প্রেস রিলিজে জানানো হয়, চরফ্যাসন সার্কেল এএসপির নেতৃত্বে চরফ্যাসন থানা পুলিশের টিম আসামীদের দেখানো মতে দেহবিহীন মাথা দুটি এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছেনিটি উদ্ধার করে। আসামী বেল্লালসহ সর্বমোট তিনজনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে তারা দায় স্বীকার করে।

পুলিশ সুপার বলেন, মামলাটি তদন্ত শেষে পরিপূর্ণ সত্য উদঘাটন করা যাবে। আমরা নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। একই সাথে পুলিশ সুপার হিসেবে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে আমি আইনানুগভাবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করব।