দৌলতখানে চিরকুট লিখে রেখে ইমামের আত্মহত্যা

দৌলতখান প্রতিনিধিঃ ভোলার দৌলতখান উপজেলায় নিজের ব্যবহার করা পাগড়ি গলায় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আব্দুল হালিম (২৪) নামে এক ইমাম আত্মহত্যা করেছে। এ সময় তাঁর ঝুলন্ত মরদেহের পাশে ৩টি চিরকুট পাওয়া গেছে। পুলিশ চিরকুট ৩টিসহ মরদেহ উদ্ধার করে দৌলতখান থানায় নিয়ে গেছেন।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ৫টার দিকে  উপজেলার চর খলিফা ৭ নম্বর ওয়ার্ড হাসমত বেপারী বাড়ি জামে মসজিদের কক্ষ থেকে তাঁর এ মরদেহ উদ্ধার করা হয় । দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত আব্দুল হালিম ভোলা সদর উপজেলা ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের মো. ফারুক ফরাজির ছেলে। তিনি হাসমত বেপারি বাড়ি জামে মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি একই উপজেলার চর খলিফা কওমী মাদরাসায় দাওরা হাদিস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আত্মহত্যার আগে তিনি নিজ হাতে একটি ডায়েরির ৩টি পাতায় ৩টি চিরকুট লিখে গিয়েছেন। চিরকুট ৩টিতে লেখা ছিল, ” আমার লাশটা আগুনে পুড়িয়ে পাহাড় নদীর বাতাসে উড়িয়ে দিও। কারণ আমার জীবনটা হলো পাপিষ্ঠ জীবন। জীবনে আমি এমন কোন জায়গায় যাইনি। যেখানে আমি পাপের সাক্ষী হইনি। অর্থাৎ যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই পাপ কাজ করেছি”।
সবাইকে বলছি, “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। ছোটবেলা থেকেই অনেক গুনাহ করেছি। তাই এই দুনিয়া আমার ভালো লাগে না। আমার কাছে জায়ের ও হযরত আলী ভাইয়ের কিছু কিতাব আছে। সেগুলো মসজিদের আলমারিতে। তা তাদের কাছে পৌঁছে দিও”।
” হে লোভা সকল, তোমরা অল্পে তুষ্ট থাকো। একাধিক বিবাহ মন্দ মনে করিওনা। কেননা এটা আল্লাহর বিধান রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাল্লাহুর সুন্নত। আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করো না। কারো প্রতি জুলুম করো না। নিজেকে ছোট মনে করে, অন্যকে বড় করো।
অসিয়ত উল্লেখ করে ৩য় চিরকুটে তিনি লিখেছেন, ” আমার লাশকে তোমরা সরকারি কারো হাতে দিয়ো না। আমার কিতাবগুলো মাদরাসায় দিয়ে দিও। আমার মেয়েটার খোঁজ খবর নিও। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ কান্না করো না। আমার মাকে শান্তনা দিও। যেন আল্লাহ তায়ালার উপর দোষারুপ মূলক কোন কথা না বলে। আমার মৃত্যুর খবর কাউকে জানাইও না।
চিরকুট ৩টি লেখার পাশাপাশি আত্মহত্যার আগে সে (আব্দুল হালিম) তাঁর ভগ্নিপতি মো. রাসেল হোসেনের ফোনে একটি মেসেজ পাঠায়। যেখানে লেখা ছিল, “আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সুস্থ ও হেফাজতে রাখুন আমিন। আর মাকে একটু শান্তনা দিয়েন। যেন শোকে ঈমান না হারায়। আল্লাহ হাফেজ।
দৌলতখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন বলেন, সোমবার দিনগত রাত ৫টার দিকে ৯৯৯-এ কল পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি আব্দুল হালিম হাসমত বেপারি বাড়ি জামে মসজিদের সঙ্গে থাকা তাঁর শয়নকক্ষে নিজের ব্যবহার করা পাগড়ি গলায় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয় মুসুল্লিরা ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখেন ইমাম আব্দুল হালিম আত্মহত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।
নিহতের ভগ্নীপতি রাসেলের বরাত দিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো জানান, আত্মহত্যা করা ইমাম আব্দুল হালিম দুইটি বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর সংসারে ৪ মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। উভয় স্ত্রী তাঁর মনের মতো না হওয়ায় তাদের দুজনকেই তিনি তালাক দিয়ে একা জীবনযাপন করছিলেন। তাঁর ৪ মাসের কন্যা শিশুটিকে দত্তক দেয়া হয়েছে। তিনি এলাকায় অনেক ঋণে ছিলেন। চারদিকের মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে পুলিশ ধারণা করছে।
দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন জানান, নিহত ইমাম আব্দুল হালিমের মরদেহ উদ্ধার করে চিরকুট ৩টিসহ দৌলতখান থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। পরিবার বিনা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আমরা দৌলতখান থানায় এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা নিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে আইনি পদক্ষেপে নেয়া হবে।