বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত কতোটা যৌক্তিক?

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অ্যালামনাই এসোসিয়েশন সেখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের যে দাবি জানিয়ে আসছিলেন, শেষ পর্যন্ত তা মেনে নেয়া হয়েছে। বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের সমঝোতা না হলেও ওই বৈঠকে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়েছে।

ওই বৈঠকে উপাচার্য বলেছেন: বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। বুয়েটে র‌্যাগিং বন্ধ হবে। সরকার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।

বুয়েট উপাচার্য শুধু আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করার জন্য এসব কথা বলেননি বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আবরার হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকেই যদিও বুয়েট প্রশাসন নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে। আবরার হত্যাকাণ্ডে বুয়েট প্রশাসনের সতর্কতার ঘাটতিকে দোষারোপ করে তিনি বলেছেন: বুয়েট প্রশাসন আরেকটু সতর্ক থাকলে হয়তো এ ধরনের হত্যাকাণ্ড নাও ঘটতে পারতো। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের প্রতি আরো নজর দিবেন এবং দায়িত্ববান হবেন বলে আশা করি।

বুয়েট প্রশাসন এক্ষেত্রে আরও দায়িত্ববান হবেন, এমন প্রত্যাশা আমাদেরও। তবে শুধু বুয়েট প্রশাসন নয়, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। একইসঙ্গে রাজনীতিকে ব্যবহার করে এমন অপরাধ যাতে কেউ কখনও করতে না পারে সেই বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত ছাত্র রাজনীতির জন্য সতর্কবার্তা বলেই বলেই আমরা মনে করি।

এটা ঠিক যে, দেশের নানা সংকটে ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। তবে রাজনীতিকে ব্যবহার করে নানা অপকর্মের ইতিহাসও কম নয়। বুয়েটের এ সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে ছাত্র রাজনীতি আবারও তার গৌরবময় সেই ধারায় ফিরে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত নেতাকর্মীদের এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। ছাত্র রাজনীতির বলি হয়ে আর কোনো মায়ের বুক খালি হবে না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

একইসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি শূন্যতার এই সুযোগে বুয়েটে মৌলবাদী কোনো সংগঠন যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।