ভোলার ডিসির কাছে এক বেকার যুবকের চিঠি

ভোলার জেলা প্রশাসকের কাছে কর্মসংস্থান তৈরি করে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি চিঠি লিখেছেন এক বেকার যুবক। মো. আজিম নামের ওই যুবক চিঠিতে ভোলার বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে বেশকিছু পরামর্শ তুলে ধরেছেন।

সেই চিঠিটি ভোলা প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

‘‘বরাবর
জেলাপ্রশাসক,
ভোলা।

বিষয়: ভোলার বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রসঙ্গে।

জনাব,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা অবহেলিত দ্বীপ জেলার মানুষ। আপনি জানেন স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের এ জেলায় কয়েকবার বিজ্ঞ বিজ্ঞ মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমাদের অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হলেও দ্বীপ জেলার বেকারত্ব দূরীকরণে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। বর্তমান সরকারের ইশতেহার অনুযায়ী একটি ইকোনোমিক জোন করার কথা থাকলেও তার অগ্রগতি কী আপনি ভাল জানেন। ১০ বছরে ফলাফল দেখতে পাব কিনা সন্দিহান। ভোলায় কাজী ফার্মস ও শেলটেক হয়েছে। ভোলার কয়টা ছেলের চাকরি হয়েছে তথ্য নিলে জানতে পারবেন।

স্যার, বর্তমানে ভোলা জেলা বাংলাদেশের অর্থ উপার্জনে বিশাল ভূমিকা রাখে।কিন্তুু এখানকার জনগনের বেকারত্ব নিরসনে সরকারের নজর বৈষম্যময়।আমরা ভোলায় ১৮ লক্ষ জনগণের মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ বেকার অনিশ্চয়তার জীবন কাটাচ্ছি।

স্যার, আপনি একটি জরিপ করে দেখতে পারেন বেকারদের জীবন কেমন কাটছে।আমরা হলাম শিক্ষিত বেকার। লেবারের কাজ করতে গেলেও কাজ পাওয়া যায় না। কাজ পেলেও কাজের সাথে মজুরির সাথে যায় না। আমরা একটি পরিক্ষা দিতে ঢাকা গেলেও নিম্মে ১৫০০ টাকা গুণতে হয়। আর গেলেও চাকরি হয় না। এভাবে কয়টা এক্সাম দেওয়া যায়। নুন আনতে পান্তা ফুরায় পরিবারের সন্তানদের কী অবস্থা তা আর কী বলব। যার কোন অর্থের উৎস নেই সে কিভাবে চাকরির জন্য ছুটবে।

স্যার, আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার তবে বেকারত্ব নিরসন করে। ৮৬০কোটি টাকার রাস্তা দিয়ে কী হবে,যদি গরিবের পেটে ভাত না থাকে, বেকার চাকরির অভাবে রাস্তার পাশে আপন মনে হাটে, মূর্খের মুখে ঘোড়ার ঘাস কাটার উপদেশ পায়।

স্যার, মুখের কথায় সিংগাপুর দিয়ে কী করব, যদি চাকরির অভাবে ৩০ বছরের শিক্ষিত ছেলে বিবাহ করতে না পারে। বেকার থাকায় ভাই বোন, মা বাবার ভালবাসা কমিয়ে দেয়। বেকারদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যায়।

স্যার, আমরা শুধু বেসিক শিক্ষা চাই না, চাই জ্ঞানের মাঝে কারিগরি দক্ষতা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর যায় সেটা আমরা সহজলভ্য করতে পারিনি। আমরা যা করেছি কেন্দ্রীয়ভাবে। আমাদের উচিত ছিল জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
এমতাবস্থায় জেলার বেকারত্ব দূরীকরণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা,দরিদ্র কল্যানে কিছু দাবি পেশ করছি:-

১। মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয় (ভোলা ১১৫) এর কাছে জোর দাবি জানানো যাতে তিনি তার আপ্রাণ চেষ্টায় ভোলায় কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার ব্যবস্থা করেন।
২। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে ৮০% কর্মকর্তা কর্মচারি ভোলা থেকে নিতে হবে। দক্ষ কর্মী না থাকলে দক্ষ করে নিয়োগ দিতে হবে।
৩। ইকোনোমিক জোনের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
৪। ভোলার টিটিসি ও যুব উন্নয়ন কে আরো তদারকির মাধ্যমে বেগমান করে তুলতে হবে। যে সকল ট্রেড নেই সেগুলো চালু করতে হবে। নামে ট্রেনিং দিলে হবে না কাজে ট্রেনিং দিতে হবে।
৫। বেকার তালিকা করতে হবে। বেকারদের ডাটাবেইজ তৈরী করে সরকারের যেকোন সুযোগ সুবিধা ও প্রশিক্ষণমূলক তথ্য দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে চাকরি ইশতেহারটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
৬। বেকার দূরীকরণে ভোলা সদরকে মডেল হিসেবে নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
৭। যেকোন চাকরীতে দরিদ্রকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৮। জেলাপ্রশাসক মহোদয়, (ভোলা) ডিসি সম্মেলনে ভোলায় ব্যপক শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জোর দাবি জানাতে পারেন।
৯। ভোলার বেকার দূরীকরণে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পেশ করা যেতে পারে।
১০। ভোলায় শিল্প কারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে জেলার গ্যাস কাজে লাগাতে হবে।
১১। প্রতি বছর ২ বার ভোলায় কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করা হোক।

অতএব, মহোদয় আপনি ভোলা জেলার প্রশাসনিক অবিভাবক। আপনার চেষ্টায় অনেক পরিবর্তন হতে পারে। ভোলার দেড় লক্ষ বেকারের আকুতি বিবেচনা করে আপনি উপযুক্ত পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা করি।

বিনীত নিবেদক,
মোঃ আজিম
সকল বেকারের পক্ষে।’’