লালমোহনে মেয়ের প্রেমের বিয়ে মেনে না নিয়ে ‘নবজাতককে হত্যা’

লালমোহন প্রতিনিধি: লালমোহনে প্রেমের বিয়ে মেনে না নিয়ে নবজাতক অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহবধূর পিতার পরিবার বিয়ে ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের গজারিয়ায় ৬নং ওয়ার্ডে ছিডু হাওলাদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড গোদা খালী গ্রামের সাফু মাঝির ছেলে নয়ন ও আলা উদ্দিন ড্রাইভারের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ধরে বিয়ে হয়। প্রায় বছর খানিক আগে তারা দুই জন পালিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু তাদের এই প্রেম, এই বিয়ে মেনে নেয়নি আলা উদ্দিন ড্রাইভার।

প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করাটাই নয়ন ও তার স্ত্রীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দুই জন ছিল একে অপরের আত্মীয় এবং পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দা। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসার ভেঙে দিতে আলা উদ্দিন ড্রাইভারের সঙ্গে যোগ হয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকে মেয়ের নানা গজারিয়া গ্রাম ৬নং ওয়ার্ডের ছিডু হাওলাদার, মেয়ের ফুফা গোদা খালী গ্রামের রুহুল আমিনসহ আরো কয়েকজন। যাদের সাথে পূর্ব থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নয়নের পরিবারের শত্রুতা চলে আসছে।

প্রেমিকযুগল পালিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করলেও মেয়ের পিতৃ পরিবার নয়নসহ তার পরিবারের কয়েকজনকে বিবাদী করে অপহরণ মামলা করেন।

কিছু দিন আগে আপোষে মিলেমিশে যাওয়ার কথা বলে মেয়ের বাবা আলা উদ্দিন ড্রাইভার, নানা ছিডু মিয়া হাওলাদার ও ফুফা রুহুল আমিনসহ আরো লোকজনের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। তখন সে গর্ভবতী অবস্থা। নয়ন, নয়নের স্ত্রী ও নয়নের পরিবারের ধারণা ছিল এই অবস্থায় মেয়েকে কাছে পেলে হয়তো আলা উদ্দিন ড্রাইভারের মন গলে যাবে। সেই সাথে ছিডু মিয়া ও রুহুল আমিনের মন নরম হবে। সুখে-শান্তিতে নয়ন তার স্ত্রী নিয়ে সংসার করতে পারবে। সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে শ্বশুর পক্ষের ডাকে সাড়া দিয়ে নয়ন তার গর্ভবতী স্ত্রীকে শ্বশুরালয়ে পাঠায়।

গোদা খালী শ্বশুরালয় থেকে নয়নের স্ত্রীকে গজারিয়া গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডে নয়নের নানা শ্বশুর ছিডু মিয়ার বাড়িতে নিয়ে আসে এবং সেখানে ওই গৃহবধূ সন্তান প্রসব করে। সন্তান প্রসবের পর সন্তান কি জীবিত না মৃত তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে ছিডু মিয়ার পরিবার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সত্য লুকাচ্ছে বলে নয়ন ও তার পরিবারের অভিযোগ।

নয়ন অভিযোগ করেন, তার সন্তান জীবিত ছিল। জন্মের পরপরই প্রসব বেদনায় কাতর হয়ে অচেতন থাকায় তার স্ত্রীর কাছ থেকে সন্তান সরিয়ে নিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে।

নয়ন আরো জানায়, প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করায় যদি অপরাধ হয়, সেটা আমাদের অপরাধ। এরজন্য যদি শাস্তি হয়, রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী আমাদের শাস্তি হবে এবং আমরা তা মেনে নেব। সদ্য পৃথিবীতে আসা আমার সন্তান তো কো অপরাধ করেনি। তাকে কেন মেরে ফেলা হলো। আমি নবজাতক সন্তান হত্যার বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছিডু মিয়া জানান, আমার নাতনিকে জ্বিনে ধরছে। সে গর্ভ অবস্থায় ছিল। সন্তান মরে গেছে। আমরা মাটি দিছি। এরপর তিনি কবর দেখান।

তবে সন্তান জীবিত হইছে নাকি মৃত হইছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

ছিডু মিয়ার স্ত্রী বলেন, নাতনি গর্ভবতী ছিল। সে পুকুর ঘাটে আছাড় খাইছে। তারে ভুতে ধরছে। এতে সন্তান মরে গেছে। সন্তান জীবিত নাকি মৃত হয়েছে জানতে চাইলে তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং ধাত্রীর কাছে জানতে বলেন।

কিন্তু কথা বলার জন্য ধাত্রীকে পাওয়া যায়নি।

গৃহবধূর মামা বলেন, বিয়ে নিয়ে গেনজাম। ওরা পালিয়ে গেছে। সংসার করছে। এই বিয়ে থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। নবজাতক সম্পর্কে জানতে চাইলে সে তার মা-বাবাকে দেখিয়ে বলে তারা বলতে পারবেন।

গৃহবধূর বাবা আলা উদ্দিন ড্রাইভার বলেন, আমার মেয়েকে জোরপূর্বক নিয়ে গেছে। মামলা হইছে। ওদের বিয়ে হইছে। সংসার করছে। আমি অনেক চেষ্টা করে মেয়েকে আনছি। সে গর্ভবতী ছিল। তাকে তার নানা বাড়িতে রাখা হইছে। সেখানে সন্তান প্রসব হইছে। সমস্যার কারণে সন্তান মরা মৃত হইছে। তাকে দাফন করা হইছে।

সন্তান জীবিত ছিল নাকি মৃত হইছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না। জানাযা হইছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ ভাই। হুজুর ডেকে জানাযা পড়ানো হইছে।