করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভোলা জেলা কতোটা প্রস্তুত?

ভোলা প্রতিদিন সম্পাদনা পর্ষদ: ভোলা জেলা এতদিন করোনাভাইরাসমুক্ত থাকায় স্বাভাবিক যে স্বস্তি ছিল জেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে, শেষ পর্যন্ত তার ইতি টানতে হয়েছে। পবিত্র মাহে রমজান শুরুর পূর্ব মুহূর্তে এক অজানা শঙ্কা এসে পৌঁছেছে দ্বীপজেলায়। আর তা হলো- বোরহানউদ্দিন ও মনপুরায় একজন করে মোট দু’জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর।

ভোলা জেলার সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী ভোলা প্রতিদিনকে শুক্রবারা জানান, গত রাতে (বৃহস্পতিবার) জেলায় ৯ জনের রিপোর্ট এসেছে। এরমধ্যে দু’জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ। তাদের একজন বোরহানউদ্দিন উপজেলার এবং আরেকজন মনপুরার।

করোনা শনাক্ত হওয়া দু’জনের মধ্যে মনপুরার শনাক্ত ব্যক্তি ঢাকার মিরপুর থেকে এসেছেন বলে জানিয়েছেন সির্ভিল সার্জন। তার কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হয়েছে। তবে বোরহানউদ্দিনের ব্যক্তির কীভাবে আক্রান্ত হতে পারেন সেই বিষয়ে এখনও ট্রেসিং করা যায়নি বলে তিনি জানান।

জেলায় শুরুর দিকে জনসাধারণের মধ্যে তেমন একটা সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি। প্রশাসনও শুরুর দিকে ঢিলেঢালা অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে তারা অবশ্য কোমর বেঁধে নেমেছে করোনা মোকাবেলায়। তবে শুরুর দিকে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এরমধ্যে অন্য জেলার সাথে নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও কিছু অর্থলোভী ট্রলারের মাধ্যমে যাত্রী পারাপার অব্যাহত রেখেছিল। যা ছিল জেলার মানুষের সাথে তাদের আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড।

এখন আসলে সেসব কথা বলে আর লাভ নেই। করোনা যেহেতু চলেই এসেছে ভোলা জেলায়, তাই সময় এখন করোনাবিরোধী যুদ্ধের। এ যুদ্ধে জেলার ২৫ লাখ মানুষের সবাইকে দক্ষ যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। করোনাবিরোধী যুদ্ধ জয়ের প্রধান কৌশল হলো ঘরে থাকা। এজন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হবেন না বলেই আমরা আশা করি।

পবিত্র রমজান মাস চলে এসেছে। এ মাসে সিয়াম সাধনাসহ রাতে মসজিদে গিয়ে তারাবী নামাজ পড়া ইসলামের অন্যতম বিধান। তবে এবার যেহেতু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে, তাই মক্কা-মদিনাসহ বিশ্বের শীর্ষ আলেমরা সবাইকে ঘরে থেকে তারাবী নামাজ আদায় করতে আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে শীর্ষ আলেমরা বসে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঘরে তারাবী নামাজসহ সব ধরনের ইবাদত আদায় করতে বলেছেন। দেশের শীর্ষ আলেমদের এ আহ্বান মেনে চলা জরুরি।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য এমন আহ্বান কষ্টের, সেটা আমরা জানি। শুধু মুসলমান কেন যেকোন ধর্মের মানুষদের জন্যই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা উপাসনালয়ে যেতে না পারা কষ্টসাধ্য। তবে পরিস্থিতির শিকার হলে মানুষকে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। করোনাবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ী হতে আমাদের এ আহ্বান মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এখন কষ্টসাধ্য সত্ত্বেও যদি আমরা এ সিদ্ধান্ত মানতে পারি, তাহলে শিগগিরই আবার সবকিছুতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবো। নাহলে আমাদের সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এজন্য করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।