কার্গো উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আসলে দাম কতোটা কমবে?

পেঁয়াজের দাম ‌‘ডাবল সেঞ্চুরি’ পার করে যখন ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ ছুঁই ছুঁই করছে, তখন কার্গো বিমানে করে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পেঁয়াজ করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ট্রেডিং কর্পোরেশন বোর্ড (টিসিবি) পেঁয়াজ আমদানি করবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে এই পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাবে।

বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে কার্গো উড়োজাহাজে করে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করা এই পেঁয়াজ দিয়ে দাম কতোটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? আদৌ কি এর মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন: পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবি’র মাধ্যমে সরাসরি তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

‘এছাড়া বেসরকারিভাবে এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানি করছে। প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বাজারে এসব পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। এছাড়া সমুদ্র পথে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে, সেগুলোও অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। এতে লাগামহীন দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

তিনি বলেন: যতদিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হবে, ততদিন এয়ার কার্গোতে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। তবে আশা করি খুব বেশিদিন এভাবে আমদানি করা লাগবে না। কারণ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে।

জাফর উদ্দিন বলেন: মিয়ানমার থেকেই মূলত বেশি পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা ছিল। কিন্তু তারা দাম অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। টনপ্রতি ৪শ ডলার বাড়িয়ে ১৫শ ডলার করে ফেলেছে। সেজন্য অন্যান্য দেশ থেকে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাসস’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: মূলত সমুদ্র পথে জাহাজে করেই পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন লাগার কথা ছিল। কিন্তু এখন এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যাচ্ছে। তাই জরুরি ভিত্তি কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটে না। তাই সাধারণত দাম কম ও সহজ পরিবহনের কারণে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটিতে। ফলে কিছুদিন আগে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। পাশাপাশি মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে। কিন্তু সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিনে দাম বেড়েছে প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এছাড়া আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১৯০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

বাসস জানায়: দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে টিসিবির মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকার ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তবুও দাম বাড়ছে হুহু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিমানে পেঁয়াজ আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।