কী কারণে মিন্নির পক্ষে আইনজীবী ছিল না?

বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে সাক্ষী থেকে আসামী হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে শুরুতে কোনো আইনজীবী ছিল না। পরবর্তীতে অবশ্য ঢাকা থেকে যাওয়া আইনজীবী এবং জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক মিন্নির পক্ষে আইনী লড়াই করেছেন।

মিন্নির পক্ষে আইনজীবী না থাকার কারণে এ মামলায় স্থানীয় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভূর ছেলে সুমন দেবনাথের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা থেকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আইনজীবীরা তাকে আইনী সহায়তা দিতে বরগুনা যায়।

কিন্তু এমন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় সাক্ষী থেকে আসামী হওয়া মিন্নি কেন আইনজীবী পেলেন না? এমন প্রশ্নে মিন্নির বাবা এমপি শম্ভূর হুমকির কথা বললেও সেখানকার একজন আইনজীবী জানিয়েছেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন: রিফাত হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এর ভয়াবহ দিক বিবেচনা করে এই মামলায় আসামীদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন জনমত এমনই ছিল।

‌‘এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও টাকা পেলেই খুনের আসামীদের পক্ষে না লড়তে আইনজীবীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন’, বলেন এই আইনজীবী।

তিনি জানান: এখন মিন্নিও যেহেতু এই মামলার আসামী হয়েছেন, তাই কোনো আইনজীবী তার পক্ষে দাঁড়াননি। বিষয়টা এমন নয় যে: আইনজীবীরা এই মামলার অন্য আসামীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু মিন্নীর পক্ষে দাঁড়াননি। এখানে কোনো আসামীর পক্ষেই এখনও আইনজীবীরা দাঁড়াননি।

তিনি বলেন: বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্বজনরাও এই মামলার আসামী। তাদের পক্ষেও কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। এখন কোনো আসামীর পক্ষেই যেহেতু আইনজীবী দাঁড়াননি, সেখানে একজনের জন্য দাঁড়ানো কতোটা মানবিক? মিন্নির পক্ষে দাঁড়ালে অন্যদের পক্ষেও দাঁড়াতে হবে। কারণ, আইনজীবী পাওয়ার অধিকার সবার আছে।

কিন্তু মিন্নির বাবা তো স্থানীয় এমপি ও তার ছেলের দিকে আঙ্গুল তুলছেন যে, এই মামলায় মিন্নির পক্ষে না লড়তে তারা আইনজীবীদের নিষেধ করছেন, হুমকি দিচ্ছেন। এটা কতোটা সত্য?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: মিন্নির বাবা যেহেতু অভিযোগ করেছেন, এটা তিনি ভালো বলতে পারবেন। আর এ ধরনের মামলায় প্রভাবশালীদের হুমকি যে থাকে না এমনও নয়। তবে আমার জানামতে এ ধরনের কিছু হয়নি।

এই আইনজীবী বলেন: এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ কিংবা স্বয়ং শম্ভূ বাবুর কথায় পুরো বার কারও পক্ষে দাঁড়াবে না, এটা অকল্পনীয়। বরং এ মামলায় কোনো আসামীর পক্ষেই এখনও আইনজীবীরা দাঁড়াননি, শুধু মিন্নীর ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে তা নয়।

তবে এ মামলায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী না পাওয়া নিয়ে যখন সমালোচনা চলছে, তখন বরগুনায় আলোচিত হচ্ছে ভিন্ন খবর। আর সেটা হলো- মিন্নির আইনজীবীদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, তার ছেলে সুনাম দেবনাথের রুদ্ধদ্বার নৈশ বৈঠক। সেই বৈঠকের কথা আইনজীবীরা স্বীকার করলেও কী আলোচনা হয়েছে, তা জানাননি তারা।

এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরদিন সকালে বরগুনার নিম্ন আদালতে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারি আসলাম। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন বাদি এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালতের আদেশ জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী।

তিনি জানান: রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এসময় মিন্নির আইনজীবীরা জামিন নামঞ্জুরের কারণ জানতে চাইলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে তার এবং অন্য আসামিদের জবানবন্দির কথা জানান আদালত।