চরফ্যাশনের ‌‘ভূমিদস্যু-সন্ত্রাসীদের’ গ্রেফতার ও বিচার দাবি

চরফ্যাশন প্রতিনিধিঃ

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানাধীন ১৬নং মুজিবনগর ইউনিয়ন ভূমিহীন সমবায় সমিতি লিঃ এর উদ্যোগে ভূমিদস্যু—সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন” অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৫ জুন সকাল ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ১৬নং মুজিবনগর ইউনিয়ন ভূমিহীন সমবায় সমিতি লিঃ এর সিনিয়র সহ—সভাপতি আবদুল মালেক মেম্বার। এসময় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড বদরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এএএম ফয়েজ হোসেন। আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলম বাচ্চু মেলকার, মোঃ সেলিম, বকুল বেগম, কিষাণী নেত্রী নাহার পারভীন রুনু, রেহেনা বেগম, মিনারা বেগম, মাহিনুর আক্তার প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ কিষাণী সভার নেতৃত্বে সিকদারের চরে সরকারের ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী কৃষি খাসজমি চাষাবাদের লক্ষ্যে আমরা অসহায় ভূমিহীন পরিবার অবস্থান গ্রহণ করি। ২০০৭ সালে স্বপন—শাহজাহান গং—এর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী জুয়েল সর্দার, সোহেল সর্দার, রুবেল সর্দার, মিঠু সর্দার, আসলাম প্যাদারা ৫০/৬০ জন রাতের অন্ধকারে সিকদার চরের দক্ষিণে ২০০ ভূমিহীন পরিবারের বাড়ী—ঘর ভাংচুর করে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়, ভূমিহীনদের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং নারী ধর্ষণ, নির্যাতন করে বহু মানুষ আহত করেন। তারপরও আমরা গত ২৮ বছর যাবৎ বিভিন্ন সময় সরকারের এক সনা (ডিসিআর) বা ১ বছরের রাজস্ব দিয়ে কৃষি খাসজমি চাষাবাদ করে আসছি এবং পরিবার—পরিজন নিয়ে ঘরবাড়ী করে বসবাস করছি।

তারা আরও বলেন, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ত্রাস সৃষ্টিকারী, চাঁদাবাজ, চোরাকারবারি, মাদক কারবারী, গরু-মহিষ চোরের গডফাদার, নারী নির্যাতনকারী, গরীব-ভূমিহীন ও অসহায় মানুষের জায়গাজমি, জবরদখল, জাল-জালিয়াতি চক্র, চরফ্যাশন উপজেলা সহকারী ভূমি অফিসের অসাধু কর্মচারী—কর্মকর্তার যোগসাজশে সিকদারের চরের কৃষি খাস জমি প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করার সিন্ডিকেট সদস্য মোঃ আসলাম, পিতাঃ নাসির প্যাদা, জুয়েল সর্দার, সোহেল সর্দার, মিঠু সর্দাররা দুলার হাট থানাধীন ১৬নং মুজিবনগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সিকদারের চরে এসে জাল—জালিয়াতি করে সরকারি কৃষি খাসজমি জোরপূর্বক দখল, বিক্রি, ধান লুট—পাট, ঘর—বাড়ি ভাংচুর, ডাকাতি, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজি করে অত্র এলাকার অসহায়, ভূমিহীন, ক্ষেতমজুর মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলা দায়ের করা হলেও তাদেরকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও ভূমিহীন নেতা ও অভিযোগকারীদের বিভিন্নভাবে অত্যাচার—নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।

বক্তারা বলেন, এই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জাল-জালিয়াতি চক্রটি সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেদের ভোল পাল্টায় এবং সরকার দলীয় কিছু সুবিধাবাদীদের ছত্র ছায়ায় নিজেদের অপকর্মে লিপ্ত থাকে। এই চক্রটি চরফ্যাশন উপজেলার সহকারী ভূমি অফিসের কিছু সংখ্যক অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারি খাসজমি জালজালিয়াতি সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নেয়। উক্ত অফিসে যখনই কোনো নতুন এসি ল্যান্ড আসেন তখনই অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতা সুসম্পর্ক ও সখ্যতা গড়ে তুলেন। এক পর্যায়ে সিন্ডিকেট চক্রটি আত্মীয়স্বজন পরিচয় দিয়ে দুর্নীতি ও অপকর্মে লিপ্ত হন। এই চক্রটির জন্য কোন অফিসারই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অবিলম্বে চিহ্নিত সিন্ডিকেট সমূলে উপরে ফেলতে হবে।

এসময় ১৬নং মুজিবনগর ইউনিয়ন ভূমিহীন সমবায় সমিতি লিঃ এর পক্ষ থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নিম্নোক্ত দাবীসমূহ উত্থাপন করা হয়—
১) চরফ্যাশন উপজেলার ভুমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সন্ত্রাসী ভুমিদস্যু সোহেল সর্দার, জুয়েল সর্দার, রুবেল সর্দার, মিঠু সর্দার, আসলাম প্যাদা গংদের খাসজমি কেন্দ্রীক অসাধু সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফেলো ও ধ্বংস করতে হবে।
২) ভূমিহীন নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩) সন্ত্রাসী ও জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আদালতে ও বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত মামলার ওয়ারেন্টরকৃত আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের কাঠগড়ায় শামিল করতে হবে।
৪) হাইকোর্ট এর রীট পিটিশন নং—৩৩২২/১৮ এর ০৩/০৪/২০১৮ তারিখের আদেশে আবেদনকারীদের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসক, ভোলা মহোদয়কে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সে মোতাবেক ডেপুটি কালেক্টর, ভোলা খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য সহকারী কমিশনর ভূমি, চরফ্যাশনকে অনুরোধ করেছেন। অবিলম্বে সিকদারের চরে বসবাসরত প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে চলতি বছরের ১ সনা লিজ (ডিসিআর) ও স্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে হবে।
৫) অবিলম্বে দিয়ারা জরিপ করে প্রিন্টেড ম্যাপের মাধ্যমে খাস জমি স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দিতে হবে।
৬) সিকদারের চরের ভূমিহীন পরিবারের জান—মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু, ভূমিদালাল এবং জাল—জালিয়াতি চক্রের খপ্পর হতে কৃষি খাসজমি উদ্ধার করতে হবে।
৭) অবিলম্বে সিকদারের চরে জাল-জালিয়াতি ও ভূয়া কাগজ পত্রাদি তদন্ত সাপেক্ষে জালিয়াতিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
৮) ২০০৭ সালে ভূমিদস্যু, লাঠিয়াল বাহিনী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী কর্তৃক উচ্ছেদকৃত ২০০ ভূমিহীন পরিবার ও নদী ভাঙ্গা অসহায় ভূমিহীন পরিবারের বাড়ীঘর পুনঃনির্মান করতে হবে।