চরফ্যাশনে গভীর সমুদ্রে ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ২৯

চরফ্যাশন প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশনে ৩টি ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া গেছে। এতে ২ ট্রলারের মাঝি মাল্লাসহ মোট ২৯ জন জেলের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। ২৪ ঘণ্টা পরও এখনো কাউকেই উদ্ধার করা হয়নি।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের সামরাজ মৎস্য ঘাটের বাবুল মাঝি ও নুরাবাদের সাজাহান মাঝির নেতৃত্বে দুটি ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে গেলে ঝড়ের কবলে পরে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।

গতকাল ৬ জুলাই সন্ধ্যায় মাদ্রাজের ওয়াজেদ আলী বলেন, আমার ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে গত ২ তারিখ সকাল ৭টায় মাদ্রাজ ইউনিয়নের সামরাজ মৎস্য ঘাট থেকে মনির মাঝির নেতৃত্বে ১৪/১৫ জন গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে গেলে এখন পর্যন্ত তাদের কোনও খোজ পাওয়া যাচ্ছে না।

সামরাজ মৎস্য আড়ৎদার সাদ্দাম বলেন, আমরা সমুদ্রে যাওয়া অন্যান্য জেলেদের কাছথেকে খবর পেয়েছি যে তারা গভীর সমুদ্রের তিনচর এলাকায় একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারসহ লোকজনকে ডুবে যেতে দেখেছে।

সামরাজ মৎসঘাটের কেরানি মন্নান মিয়া বলেন, কালুমিয়ার ট্রলারের আবু কালাম মাঝি ওয়াজেদ আলীর ট্রলারটি ডুবে যেতে দেখেছে এবং তিনি উদ্ধারের চেষ্টা করেও প্রবল ঝড়ের জন্য ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।

মান্নান মিয়া আরও বলেন, সেই ট্রলারে আমার মামা শ্বশুরসহ ৫-৬ জন আত্মীয় আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ট্রলার মালিক ওয়াজেদ আলী আরও বলেন, ট্রলারে আমার ছেলেও রয়েছে। এ বিষয়ে চরফ্যাশন থানায় আইনি সহায়তা পেতে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

একই দিনে মাদ্রাজ ইউনিয়নের সামরাজের আরেকটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে মামুন মাঝিসহ ১৪ জন মাঝি মাল্লাকে অপর একটি ট্রলারে করে উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে।

মাদ্রাজ ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল জমাদার মুঠোফোনে জানান, গভীর সমুদ্রে ২টি ট্রলারডুবির খবর পেয়েছি। একটির মাঝি মাল্লা উদ্ধার হয়েছে অপর ট্রলারটি উদ্ধারে অন্য একটি ট্রলার চেষ্টা করেও প্রবল ঝড়ের জন্য ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে, আমরা সহায়তা পেতে থানা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুল আরেফিন বলেন, আমরা ট্রলার ডুবির খবর পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে, কিন্তু ওয়াজেদ আলীর ট্রলার ডুবে গেছে এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তাদের জেলেদের সাথে এখনও যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।

তিনি জানান, মামুন মাঝির জালসহ ১টি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে এবং মামুন মাঝিসহ ১৪ জন সাতরে অন্য একটি ট্রলারের মাধ্যমে উদ্ধার হয়েছে।

অপর দিকে নুরাবাদ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে সাজাহান মাঝির নেতৃত্বে ৬ জুলাই শনিবার ভোর ৫টায় সমুদ্রে মাছ শিকারে গেলে ঢালচর চ্যানেল থেকে শিবচর সংলগ্ন গভীর সমুদ্রে বিকাল ৪টার সময় একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে মাঝি মাল্লাসহ মোট ১৪ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

দুলার হাট থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উদ্ধার তৎপরতা চলছে বলে জানান।

ঢালচর কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার ওয়ালি উল্লাহ বলেন, বঙ্গোপসাগরের গভীরে ট্রলার ডুবির ঘটনা শুনেছি। আমাকে নুরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জানালেন। ঢালচর চ্যানেল পরিদর্শন চলছে কিন্তু যে লোকেশনে ট্রলারটি ডুবেছে খুবই দুর্গম এলাকা ও ঢালচর থেকে প্রায় ৭ ঘণ্টার পথ এবং সেখানে আমাদের পক্ষে যাওয়া পসিবল না, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, অনুসন্ধান চলছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন বলেন, নুরাবাদ ও মাদ্রাজ ইউনিয়নের ট্রলারডুবির ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্পটে অনুসন্ধান চলছে।

নিখোজ জেলেরা হলেন- ট্রলারের মাঝি মাদ্রাজ ইউনিয়নের চর নাজিমুদ্দি গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের মনির হোসেন, একই ওয়ার্ডের জুয়েল, মাদ্রাজ ইউনিয়নের জিহাদ হোসেন, সেলিম, বাবুল, অলি উদ্দিন, বেলায়েত হোসেন, কামাল, জিন্নাগড় ইউনিয়নের অজিউল্লাহ, মাকসুদ, শশিভূষণ থানার তৌছির ও জাহাঙ্গীর, নুরাবাদ ইউনিয়নের ৯নং ওয়র্ডের সাজাহান মাঝি, সুলতান ও রুবেলসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন।