ধর্মগুরুরা কি এখন বৈশ্বিক লাভের দিকেই বেশি হাঁটছেন?

ধর্মের গতিপ্রকৃতি: ১

শৈশবের কথা বলছি। ভোলার রামদাসপুরের মতো বৃহত্তর একটা এলাকাতে প্রথমে ২৭ দাগ বাজারে, পরবর্তীতে রামদাসপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠে বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হতো ৩-৪ দিন যাবত। স্থানীয় জনতার পাশাপাশি আশপাশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরাও আসতেন। এমন অনেককেই আমি চিনি যারা এক ওয়াজ শুনেই দাড়ি রেখেছেন, ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করেছেন।

আজ ২০ বছরের ব্যবধানে একটা ওয়ার্ডেই ৬-১০ টা ওয়াজের আয়োজন করা হয়। ২০ বছর আগে যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ কোটি, আজ সেখানে প্রায় ১৮ কোটি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে আলেম ওলামার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলামি ধর্মগুরুরা তাদের ধর্মে দীক্ষিত মানুষের ইমান আমলের পথ ডাকবেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ধর্মগুরুরা তাদের ধর্মীয় জনতাকে তাদের ধর্মের প্রতি ডাকবেন এটাই স্বাভাবিক।

এখন কথা হলো জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে ধর্মগুরুদের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা বেড়েছে (যদিও তুলনামূলক মন্দিরের সংখ্যা কমেছে)। প্রশ্ন হলো সমাজে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে নাকি কমেছে? আগেকার দিনে অল্প সংখ্যক ধর্মগুরুরা যেখানে মানুষকে ধর্মের দিকে ধাবিত করতে পেরেছেন, সেখানে আজ কেন এতো এতো মাধ্যমে ডেকেও মানুষকে ধর্মপ্রাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন? তবে কি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নৈতিক শিক্ষার চেয়ে সনদ ভিত্তিক শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন? তবে কি ধর্মগুরুরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে ধর্মের মূলমন্ত্র পরকালের চেয়ে বৈশ্বিক লাভের দিকেই মনোনিবেশ করছেন?

একটি মাদ্রাসায়, মসজিদে, মন্দিরেতো ধর্মগুরুরা ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যেই থাকবেন। ধর্মপ্রাণ প্রত্যেক মানুষই সার্বক্ষণিক সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি অনুভব করবেন। মুসলিমরা সৃষ্টিকর্তাকে হাজিরনাজির মনে করবেন। অথচ আমরা কি দেখছি? পবিত্র স্থানগুলোও আজ ধর্মগুরুদের দ্বারা প্রতিনিয়ত অপবিত্র হচ্ছে।

তবে কি আমরা ভিন্ন পথে হাটছি? তুর্কিস্তানের দিকে হেটে মক্কা-মদিনা কামনা করছি? বঙ্গোপসাগরের দিকে হেটে তীর্থস্থানের সুখ অনুভব করছি?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভোলা প্রতিদিন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)