বরিশালের এক দুঃখী রাজার গল্প

মুমিনুল একরাম মুবিন: বরিশালের এক দুঃখী রাজা। তিনি ছিলেন চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের রাজার ১৬তম বংশধর। তিনি বাংলার বারো ভুঁইয়ার অন্যতম ও দক্ষিণবঙ্গের প্রাদেশিক রাজধানী চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের প্রথম রাজা কন্দর্প নারারণ রায় ও রাণী দূর্গাবতীর রাজবংশের ১৬তম উত্তরাধিকার ও শেষ রাজা। স্থানীয়রা এ বাড়িকে মাখন রাজার বাড়ি নামেও চেনেন।

২০১৬ সালে রাজা সতীন্দ্র নারায়ণ রায় মারা যান। বর্তমানে যে রাজ বাড়ি এবং তার ভগ্নাবশেষ দেখা যায় এটি নির্মিত হয়েছিল ১৮০০ সালের শেষের দিকে।একদম সাধারন পুরান বাড়ি ও মাত্র ৬টি কামরার একতালা ভবন। চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের রাজ্য এবং শাসনামল বিলুপ্ত হলেও তাদের কীর্তি মাধবপাশার দূর্গাসাগর দিঘীটি আজো কালের সাক্ষ্য বহন করছে। রাজবাড়ির কাছেই নান্দনিক দোচালা দুর্গা মন্দিরটি যে কোন দিন পুরপুরি ভেঙে পরবে।

বর্তমানে রাজা সতীন্দ্র নারায়ণের পুত্র ১৭তম বংশধর দিলীপ রায়, রাজা উপাধি ব্যবহার করেন আন অফিসিয়ালী। চন্দ্রদ্বীপের রাজ্যের রাজধানী পূর্বে ছিলো পটুয়াখালীর বাউফলে, পরবর্তীতে নদী ভাঙনের কারণে মাধবপাশায় স্থানান্তরিত করা হয়।

সতীন্দ্র নারায়ণের বংশেরই এক রাজা বরিশালের বিখ্যাত দূর্গাসাগর দিঘীটি খনন করেন। যা দক্ষিন বাংলার সর্ববৃহৎ দীঘি। বর্তমানে দিঘীটির ব্যবস্থাপনায় আছে রাজা সতীন্দ্র নারায়নের বড় ছেলে দিলীপ রায় এবং মালিকানায় আছে বাংলাদেশ সরকার।

এই জমিদারি ১৪০০ শতক থেকে ১৬০০ শতক পর্যন্ত স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন। পরবর্তীতে মুঘল শাসনামলে ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে তারা মুঘল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর এটি রাজশাসন থেকে জমিদারে পরিণত হয়। এই জমিদারির অধঃপতন শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময়। এই জমিদারীর রাজস্ব ধরা হয়েছিল ৮৩০০০ সিক্কা। যা জমিদারের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব ছিলো না। যার ফলস্বরূপ ১৭৯৯ সালে এই জমিদারি নিলামে উঠে। পরে জমিদারির কিছু অংশ বাকী থাকে। আর এইভাবে বড় একটি রাজপরিবার থেকে ক্ষুদ্র জমিদার।

দেশভাগ এবং জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আইনের মধ্য দিয়েই এই জমিদার বাড়ির জমিদারির অবসান ঘটে।

লেখক: বৃহত্তর বরিশালের ভোলা জেলার বাসিন্দা। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি নিবেদিত প্রাণ। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভোলা প্রতিদিন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)