বিদেশি কূটনীতিকদের ঢাকা ত্যাগ কী বার্তা দেয়?

আব্দুর রহমান নোমান: করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় নিউইয়র্কসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্র যখন গলদঘর্ম, দিন দিন শত শত মানুষ যখন মারা যাচ্ছে সেখানে, সেই মুহূর্তে ঢাকা থেকে বিশেষ একটি ফ্লাইটে দেশটির ২৬৯ জন নাগরিককে ফেরত নেওয়া হয়েছে।

সেই নাগরিকদের মধ্যে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত জনবল, কূটনীতিক, দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যান ওই মার্কিন নাগরিকরা। বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত যখন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত মাত্র ৫১ জন, মৃতের সংখ্যা ৫; তখন মার্কিন কূটনীতিকসহ দূতাবাসে কর্মরত জনবল এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের করুণ অবস্থার মধ্যেও কেন বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করলেন? এটা কি ভিন্ন কোনো বার্তা দেয়?

এমন প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন শিক্ষকের কাছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলেন, ‌‘না, এটা ভিন্ন কোনো বার্তা দেয় না। এটা স্বাভাবিক একটা প্রবৃত্তি। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্বব্যাপী আমরা এটা দেখে আসছি। উহানে যখন করোনা মহামারী চলছিল, তখনও চীনের বেইজিংসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা এমনই বিশেষ ফ্লাইটে চীন ত্যাগ করেছেন। সুতরাং এটা নতুন নয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘করোনা আউটব্রেকের পর বিশ্বব্যাপী আমূল পরিবর্তন চলে এসেছে। পুরো বিশ্ব এখন ঘরবন্দী। মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক। কূটনীতিকরাও এর বাইরে নন। তারাও জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন। যেখানে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রিন্স চার্লসসহ বাঘা বাঘা ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানে আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক। হয়তো তারা নিজদেশে এখানকার চেয়ে আরেকটু ভালো থাকবেন, নির্ভার থাকবেন এবং অন্তত বিপদের সময় সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা পাবেন, এই আশায় তারা ঢাকা ত্যাগ করতে পারেন।’

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার তথ্য গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন নাগরিকরা। ঢাকাস্থ এই মার্কিন কূটনীতিকরাও কি তেমন কোনো আশঙ্কা থেকে ঢাকা ত্যাগ করতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে, আমাদের এখানে করোনা পরীক্ষার কিটসহ নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে। শুরুর দিকে সমন্বয়হীনতাও ছিল। কিন্তু তাই বলে তথ্য গোপনের ঢালাও অভিযাগ করা যায় না। এটা ঠিকও নয়। সরকার তথ্য গোপন করবে কেন? এতে তো লাভের চেয়ে বরং ক্ষতিই বেশি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথা বলেছেন এ প্রসঙ্গে। তথ্য গোপনের অভিযোগের সাথে আমি একমত না। এই মার্কিন নাগরিকরা নিজেদের দেশে যেতে পারেন বিপদের সময়কার আত্মতৃপ্তির জন্য, অন্য কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। যেকোন বিপদে মানুষ তার স্বজনদের কাছাকাছি থাকতে চায়। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।’

তবে করোনা মোকাবেলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সচেতন থেকে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন এই শিক্ষক।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হয়। সোমবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় পৌনে আট লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন।

এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ৩৮ হাজার। আর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দেড় লক্ষাধিক মানুষ।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। আর প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। অন্যদিকে বাংলাদেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ জন। মারা গেছেন ৫ জন।

করোনাভাইরাস মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে কতজন প্রাণ হারাবে সেটা জানা যাবে আরও দুই সপ্তাহ পরে। তাই সতর্কতা হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সামাজিক বিচ্ছিন্নতার নির্দেশনা বাড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, মডেল অনুযায়ী ‍দুই সপ্তাহ পরে আঘাতটা আরও বড় হবে। তাই সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সময় বাড়ানো হলো।

আর করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসে টানা ১০ দিনের ছুটি চলছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ৪ এপ্রিলের সঙ্গে ৫ দিন সাধারণ ছুটি এবং ২ দিন সাপ্তাহিক ছুটিসহ আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।