ত্যাগ স্বীকার করলে রাজনীতিতে সফল হওয়া যায়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: যিনি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন তিনি রাজনীতিতে সফল হতে পারেন, জাতির জন্য কাজ করতে পারেন। এটাই একজন সফল রাজনীতিবিদের চরিত্র। আর আওয়ামী লীগের নেতারা বারবার এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ করেছেন।

এছাড়া ছাত্রজীবন থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িত থাকায় রাজনীতি নতুন না হলেও আওয়ামী লীগের মতো বিশাল সংগঠনের দায়িত্ব নিতে হবে, এমনটা কখনো ভাবেননি বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা।

১৯৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পরবর্তী প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: রাজনীতি আমার জন্য নতুন কিছু ছিল না। স্কুল থেকে রাজনীতি করতাম। দেয়াল টপকে যেতাম মিছিলে, আন্দোলনে যোগ দিতাম। কলেজ জীবনে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। কলেজে ছাত্রলীগ গড়ে তোলা, কলেজে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় আন্দোলন করেছি। কিন্তু কখনও ভাবিনি এত বড় সংগঠনের গুরুদায়িত্ব আমাকে নিতে হবে, নিতে পারব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন: ক্ষমতায় বসে করা কোনো দল আওয়ামী লীগ নয়। বাংলার মানুষের যতোটুকু অর্জন সেটা আওয়ামী লীগের সময়ের। জাতির পিতা এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। এটাই ছিলো তার এক মাত্র লক্ষ্য। এই চিন্তার জায়গা থেকেই তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গেছেন। সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তিনি অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন: জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী যদি পড়েন তাহলে আপনারা দেখতে পাবেন তিনি সারাজীবন কতোটা কষ্ট করে গেছেন। বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনও মানুষের কল্যাণের পথ ছেড়ে যাননি। তিনি একটা লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি এনে দেবেন। আর তিনি ওই লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন এবং স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন: বারবার আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসছে। কিন্তু জাতির পিতার হাতে গড়া এ সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে সফল হয়নি। রাজনীতি আমার জন্য নতুন নয়, তবুও আওয়ামী লীগ এতো বড় একটি দলের দায়িত্ব নিতে পারবো তা কখনও ভাবিনি। আওয়ামী লীগ আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন: জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকতেন বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারতো। কিন্তু ৭৫’র ১৫ আগস্টের কারণ সেটা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘারত এসছে। কিন্তু বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মাত্র এক দশক, এই এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে শুক্রবার বিকেল ৩টা ৭ মিনিটে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি।

এসময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের আর ৭৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একই মঞ্চে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল শুরুর দিনে প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। এবারের সম্মেলনে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার কাউন্সিলর ডেলিগেটসহ আমন্ত্রিত অতিথি মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অংশ নেন।

এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’।

২১ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে জানিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত সম্মেলন মূলতবি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। কাউন্সিলরদের সেই অধিবেশ থেকে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।