ভোলায় গবাদিপশুর আধুনিক কেল্লা চেয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকীয়

ভোলায় গবাদিপশুর কেল্লা হিসেবে আধুনিক স্থাপনা তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে গবাদিপশু রক্ষার পাশাপাশি বহু মানুষের জীবনও রক্ষা পাবে বলে উল্লেখ করা হয়।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‌‌‘‘এ বছর সিলেট-সুনামগঞ্জ এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার একটি দৃশ্যের কথা অনেকেরই মনে আছে নিশ্চয়ই। বন্যার স্রোতে একের পর এক গরু হারিয়ে যাচ্ছে। অবধারিত মৃত্যুকে কি সহজে মেনে নিল অবলা পশুগুলো?

পাশে বন্যায় আক্রান্ত মানুষ নিরুপায় হয়ে দেখছিল গবাদিপশুগুলোর এমন মৃত্যু। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মানুষ আর গবাদিপশুতে একাকার হয়ে যাওয়ার ছবি ও খবরও সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি।

ঘরের সবকিছুর মায়া ত্যাগ করতে পারলেও গবাদিপশু কেউ সহজে ছেড়ে আসতে পারে না। একে তো সন্তানের মতোই লালন করা হয়, এরপর অসহায় মুহূর্তে সেগুলোই হয়ে ওঠে বড় সম্পদ। দুর্যোগের পর গবাদিপশু বিক্রি করে হলেও মানুষ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। এরপরও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু মারা যায়। এবারের বন্যায়ও তেমনটি ঘটেছে। কারণ, গবাদিপশুর জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে এখানে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

প্রথম আলো জানাচ্ছে, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় নদ-নদীতে উচ্চ জোয়ারের কারণে ভোলায় প্রতিবছর অনেক গবাদিপশু মারা যায়। এ বছর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে। শুধু গত আগস্টে মাত্র পাঁচ দিনের জোয়ারে ভেসে, ডুবে ও রোগে ভুগে মারা গেছে মহিষের প্রায় ৫০টি বাছুর। যার একেকটির দাম অন্তত ৫০ হাজার টাকা।

দেশের মাংস ও দুগ্ধজাতীয় খাবারের চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রাখে ভোলা। জেলাটিতে প্রায় ছয় লাখ গবাদিপশু রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ গবাদিপশু পালিত হয় ৭৫টি চরে। স্বাধীনতার পর গবাদিপশু রক্ষায় এই দ্বীপজেলায় মাটির ৪০টির মতো কেল্লা নির্মাণ করা হয়। মাটির কেল্লা বলতে বোঝায় মাটির উঁচু ডিবি। কিন্তু দীর্ঘদিনে ওই সব কেল্লার মাটি ক্ষয়ে সমতল হয়ে গেছে।

ফলে সেগুলো এখন আর সুফল দিচ্ছে না খামারিদের। যদিও গত কয়েক বছরে মাত্র তিনটি আধুনিক কেল্লা নির্মাণ করা হয়েছে। গবাদিপশুর সংখ্যার তুলনায় সেগুলো কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। চরগুলোতে আধুনিক কেল্লা না থাকায় গবাদিপশুর পানিতে ভেসে যাওয়া, ঘাসের সংকটসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে ৫০টি আধুনিক কেল্লা নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলাম। ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৪০টির মতো কেল্লা তৈরির পরিকল্পনাও নিয়েছে।’ আমরা আশা করছি, কেল্লাগুলো দ্রুত নির্মাণ করা হবে। তবে খামারিরা মনে করছেন, চরগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে সমস্যা সমাধানে কমপক্ষে ১৫০টি আধুনিক কেল্লা নির্মাণ জরুরি। ফলে তাদের এ দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’’