মেয়েটা ঘরে অসুস্থ, রাস্তায়ও বের হই না: গৌরাঙ্গের স্ত্রী

ফেসবুক মেসেঞ্জারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে কটুক্তির স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার পর ধর্মীয় উত্তেজনায় পাল্টে গেছে ভোলা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে’র পরিবারের সদস্যদের জীবন। ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে উত্তেজনা প্রশমনে কারাগারে রয়েছেন অভিযুক্ত গৌরাঙ্গ। অন্যদিকে গত দু’সপ্তাহ ধরে অনেকটা গৃহবন্দী জীবন কাটছে তার পরিবারের সদস্যদের। সেই দুঃসহ জীবনের কথা বিবিসি বাংলার কাছে তুলে ধরেছেন গৌরাঙ্গের স্ত্রী রিনা রাণী দে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গৌরাঙ্গের স্ত্রী রিনা রাণী দে বলেন, এমন কাজ তিনি করেননি। এ ঘটনায় পুরো পরিবার বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এরকম থাকার থেকে না থাকা ভালো। অনেক কষ্টের জীবন। মেয়েটা অসুস্থ পড়ে রয়েছে ঘরে, মেয়ে নিয়ে থাকি। স্বামীর এই অবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কতদিন এভাবে থাকতে হবে সেটিও অনিশ্চিত। গত দুই সপ্তাহ ধরে কেউ বাড়ির বাইরে বের হই না। এমনকি রাস্তায়ও বের হই না। আমাদের সামনের রাস্তায়ও বের হই না। ঘরেই থাকি।’

এ ঘটনার পর থেকে বাজারে গৌরাঙ্গের দুটি দোকানও বন্ধ রয়েছে বলেও জানায় বিবিসি বাংলা। গৌরাঙ্গের একটি দোকানে বসতেন তার ছোট ভাই রাজকুমার দে। তিনি বলেন, খুব আতঙ্কে আছি। আমরা কেউই বাইরে যাওয়ার মতো চিন্তাও করতে পারি না। যে বাইরে যাব, ঘোরাফেরা করব। বাজারে যাব, দোকান খুলবো এই সাহস পাচ্ছি না আমরা।

গৌরাঙ্গ চন্দ্রের পরিবার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বরাতে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে গৌরাঙ্গ চন্দ্রকে ফাঁসানো হয়েছে। গৌরাঙ্গ নামের অ্যাকাউন্টটি অল্পকিছুদিন আগে খোলা হয়েছিল। তবে ঘটনার পর থেকে ওই অ্যাকাউন্ট সচল নেই।

ভোলায় এ ঘটনার সূত্রপাত ১৫ সেপ্টেম্বর। ওই দিন জয়রাম ও গৌরাঙ্গ নামে আইডির মধ্যে মেসেঞ্জার কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অবমাননাকর কিছু বক্তব্য থাকায় বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিতর্কিত ওই পোস্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ডায়েরি করেন গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে। জেলা সদরে এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়।

ভয়-আতঙ্কের দিকটি তুলে ধরে স্থানীয় মন্দিরের সেবায়েত বলেন, শুনি মিছিল করবে, এই করবে, ওই করবে এটাই চিন্তা। আমরা তো সংখ্যালঘু।

এলাকার শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নেপাল চন্দ্র দে বলেন, গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে সক্রিয় রাজনীতি করে, বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত, তাকে ঘিরে কেন? এটাতো প্রশ্নই জাগে। যে যদি ষড়যন্ত্রই না থাকে, তাহলে তাকে ঘিরে কেন এটা।

ভোলায় এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে বিধায় বিষয়টি তদন্তে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তদন্তকাজ সময়সাপেক্ষ বলে জানান ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।

তিনি জানান, গৌরাঙ্গ নামের আইডির কোনোকিছু আমরা চাইতেই পারি নাই। কারণ একটা আইডির ডিটেইলস চাইতে গেলে সেখানে লিংকসহ পাঠাতে হয় ফেইসবুক আইডির। আমরা ওইটার লিংক পাইনাই। আমরা জয়রামের লিংক পেয়েছি। আমরা আশাবাদী যে এটাও বের করতে পারবো।

এখনো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভোলায় উত্তেজনার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টি যদি থাকে। তারা এটা ঘৃণা জানাবে, প্রতিবাদ করবে স্বাভাবিক। কিন্তু এটা যেন সেই ধর্মীয় পরিধির মধ্যেই থাকে। এটাকে যেন আবার কেউ রাজনৈতিকভাবে কেউ ব্যবহার করতে না পারে। আমি উদ্বিগ্ন এটা নিয়েই।