চর কুকরি মুকরি কেন ও কীভাবে যাবেন

চর কুকরি মুকরি। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা একটি চর। এই চর কুকরি মুকরিতেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এখানে যেসব প্রাণী দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল, বন্য মহিষ-গরু, বন-বিড়াল, বন মোরগ, প্রভৃতি।

চর কুকরিমুকরি ( Char Kukri Mukri ) শীতকালের চিত্র ভিন্ন ধরনের। সূদুর সাইরেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে সিংহ ভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন স্বপ্নের দ্বীপ কুকরিমুকরি এর চর অতিথি পাখিদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়।

কুকরি মুকরির ( Kukri Mukri ) প্রধান আকর্ষণ সাগরপাড়। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করবে। আপনি চাইলে পাশের ঢালচরও ঘুরে আসতে পারেন যেখানে আছে তারুয়া সমুদ্র সৈকত।

চর কুকরি মুকরি যাওয়ার উপায়
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ভোলার বেতুয়াগামী লঞ্চ। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টা পর্যন্ত ভালো মানের কয়েকটা লঞ্চ ছাড়ে। ডেকের ভাড়া ৪০০-৫৫০ টাকা, সিংগেল ও ডাবল কেবিন রয়েছে। দরদাম করে নিতে পারবেন। বেতুয়া পৌছাবেন আনুমানিক ভোর ৫টায়। বেতুয়া ঘাট থেকে অটো নিয়ে চলে যান চরফ্যাশন বাস টার্মিনালে, অটো ভাড়া জনপ্রতি ৩০/৪০ টাকা, সময় লাগবে ২০/২৫ মিনিট। চরফ্যাশন থেকে আপনি চর কচ্ছপিয়া যাওয়ার জন্য বাসে উঠে পরুন। সময় লাগবে ১ থেকে দেড় ঘণ্টার মতো।

চর কচ্ছপিয়া থেকে দক্ষিণ আইচা ঘাট যাওয়ার জন্য আবার অটো নেওয়া লাগবে। চর কচ্ছপিয়া থেকে কুকরি মুকরি যাওয়ার ট্রলার পাবেন। ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৪০ টাকা আর সময় লাগবে আনুমানিক দেড় ঘণ্টার মতো। চর কুকরি মুকরি ট্রলার ঘাট থেকে চর মুন্তাজ, আর চর মুন্তাজ থেকে চর কচ্ছপিয়া ঘাট ট্রলারে করে যাওয়া লাগবে। এসব ক্ষেত্রে ভাড়া দামাদামী করা লাগবে।

কোথায় থাকবেন
আপনি চাইলে চর কুকরি মুকরিতে রাত কাটাতে পারবেন। চরফ্যাশনের এমপি জ্যাকব সরকারি অর্থায়নে রেষ্ট হাউজ করেছেন, যার প্রতিটি রুমের ভাড়া ২০০০ টাকা ও ৫০০০ টাকা। রেস্ট হাউজের কর্তৃপক্ষের মতে এক রুমে ২ জন থাকা যায় কিন্তু এক রুমে ৪ জন অনায়াসে থাকতে পারবেন। এই রেস্ট হাউজে একটা টেনিস কোর্ট আছে, সুইমিংপুল আছে (যদিও পানি ময়লা), সব রুমেই এসি আছে, রুমগুলোও বড়।

এছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকলে ক্যাম্পিং (Camping) করতে পারেন।

কোথায় খাবেন
কোস্ট ট্রাস্ট, বন বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে আলোচনা সাপেক্ষে খাবার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া চর কুকরি মুকরি বাজারে খাবার হোটেল আছে। অবশ্যই আগে জানিয়ে রাখবেন। তাহলে খাওয়া নিয়ে আর চিন্তায় থাকা লাগবে না।

কিছু পরামর্শ ও সতর্কতা
এটা চর এলাকা তাই গাড়ির কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
হরিণ শিকার থেকে বিরত থাকুন এটা দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্থানীয়দের সাথে ভাল ব্যবহার করুন।
বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই তাই প্রচুর পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।
নদীতে সাঁতার কাটার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
গ্রামীণ ও টেলিটক নেটওয়ার্ক ভালো। তাই এই দুই অপারেটর এর সিম ব্যবহার করতে পারেন।