জাতীয় পার্টির বৈধ চেয়ারম্যান কে?

রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদের যখন পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করছেন, তখন দলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্ন উঠেছে দলের বৈধ চেয়ারম্যান কে?

এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবং সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, ‘রওশন এরশাদ নয়, বরং জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র এবং প্রয়াত এইচএম এরশাদের লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী জিএম কাদের-ই দলের বৈধ চেয়ারম্যান।’

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু

তিনি বলেন, শুধু জাতীয় পার্টি নয়, কোনো দলেরই গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের বেলায়ও তাই। দলের প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান করে গেছেন। তাই এ বিষয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।

এছাড়া কক্সবাজারে একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৯ জেলার নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে পার্টির সাথে ঐক্যবদ্ধ। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকাবস্থায় চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে মনোনয়ন দিয়ে গেছেন। তাই এ ব্যাপারে বির্তকের আর কোনো অবকাশ নেই।

তিনি বলেন: যারা এ নিয়ে বির্তক করছেন তারা গঠনতন্ত্র মানেন না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব মূলত শুরু বৃহস্পতিবার থেকে। এদিন দুপুরে একটি সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বেগম রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে কো-চেয়ারম্যানের পদ গ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী ফিরোজ রশিদ

আগামী ৬ মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে চেয়ারম্যান নির্বাচন করার কথা জানান জাপার এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।

এসময় রওশন বলেন, পার্টিতে কী হচ্ছে? জাতীয় পার্টি কী আবার ভাঙতে যাচ্ছে? অতীতে কিন্তু জাপা ভেঙেছে। আসুন সবাই মিলে পার্টিটাকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করি।

এর কিছুক্ষণ পর জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলাপকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে, ঐক্যবদ্ধ থাকবে। ঐক্যের প্রশ্নে দলের কোনো সমস্যা হবে না। কেউ নিজেকে রাজা ঘোষণা করেলই রাজা হয়ে যায় না। রাজা হতে হলে রাজ্য থাকতে হয়, প্রজা থাকতে হয়। তাই কে কী ঘোষণা করেছে তাতে জাতীয় পার্টির কিছু যায় আসে না।

তিনি বলেন, যারা শৃংখলা বিরোধী কার্মকাণ্ডে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিশাল আকাশ থেকে কত তারা ঝড়ে পড়ে তাতে আকাশের কি আসে যায়।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

এমন পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের জেরে জাতীয় পার্টিতে ভাঙন দেখা দিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো ভাঙন নেই। যার যার নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। আর যাদের বিষয়ে এসব বলা হচ্ছে তারাও জাতীয় পার্টির পরীক্ষিত নেতাকর্মী। আমি আশা করি, গঠনতন্ত্র মেনে তারাও মূলধারার সঙ্গে চলে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করবেন।

‘এরপরও যদি কেউ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান দাবি করেন, আর এ কারণে যদি দলে ভাঙন দেখা দেয়, তাহলে তারা কোনোভাবেই জাতীয় পার্টির ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কারণ, তারা নিবন্ধিত নয়। নির্বাচন কমিশনে এরশাদের মূল জাতীয় পার্টি নিবন্ধিত। এই জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জিএম কাদের-ই দলের চেয়ারম্যান’, বলেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।