ভোলা থেকে বরিশাল গিয়ে হেফাজত নেতাকে ধরিয়ে দেয়ার গল্প

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় এর বিরোধিতা করে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছিল হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সেই তাণ্ডবে এখন ভাটা পড়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। মুন্সিগঞ্জ থেকে পালিয়ে বরিশালে আসা, সেখান থেকে ভোলায় আসতে চাওয়া এমনই এক হেফাজতকর্মীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জে তাণ্ডব চালানো মোস্ট ওয়ান্টেড ওই হেফাজত নেতার নাম আতাউল্লাহ। তিনি হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুরীর ছেলে। পুলিশের হাতে তাকে ধরিয়ে দেয়ার দম বন্ধ হওয়া সফল অভিযানের বর্ণনা দিয়েছেন ভোলা প্রতিদিন এর সদর থানা প্রতিনিধি সরদার রিহান।

ভোলা প্রতিদিনকে তিনি বলেন, সমকালীন হেফাজতকাণ্ডের পর রাতে খুব বেশি ঘুমাই না। রমজান শুরু হলে একসাথে ফজর নামাজ পড়ে সকালে ঘুমাই। শনিবার (২৪ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টায় চাচাতো ভাই ঢাকা থেকে কল দিয়ে জানালো ভোলায় মেঝ কাকার বাসায় ডিবি পুলিশ রেইট দিয়েছে। একটু পরেই জানতে পারলাম- কাকা কাকিকে ডিবি পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। শুনে ৬টা বাজে চলে গেলাম ডিবি অফিসে। ডিবি অফিসে ঢুকতে ঢুকতেই জানতে পারলাম হেফাজত ইস্যুতে তাদের এই অভিযান।

রিহান বলেন, ডিবি অফিসে যাওয়ার পর পুলিশ আমাকে জবাবদিহি কর‍তে শুরু করেছে। তাদের আশ্বস্ত করলাম দেশের এই পরিস্থিতিতে দুই-চার দশটা হেফাজত কর্মী ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করাটা নাগরিক হিসেবে ঈমানী দায়িত্ব। তাদের পাল্টা প্রশ্ন- হেফাজতের বিরুদ্ধে কথা বললে জান্নাত পাবেন না। বললাম, আমি মনে করি হেফাজতের কর্মী ধরিয়ে দিতে পারলে জান্নাত পাবো। তারপর জিজ্ঞেস করলাম- তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? পুলিশ মামলার কাগজপত্র দেখালো। তারপর বললেন, আমরা মুন্সিগঞ্জ থেকে স্পেশাল টিম আসছি। সিরাজদীখান হেফাজতের তাণ্ডবের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামির সাথে আপনার কাকার কলের সূত্র ধরে এসেছি। আমরা ৮ জন লোক সারারাত নির্ঘুম। এখন তাদেরকে নিয়ে এসেছি জিজ্ঞাসাবাদ করতে। চিন্তার কারণ নাই, আমাদের সহায়তা করেন, আমরাও আপনাদের সহায়ক হবো। বললাম, স্বাগতম।

ভোলা প্রতিদিন এর এই প্রতিনিধি বলেন, হেফাজতের ক্রিমিনাল সিরাজদিখানের আতাউল্লা আমার কাকির ফুফাতো ভাই। তাণ্ডবের পর ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে একাধিক মামলা হয়েছে। সেই ক্রিমিনাল বরিশাল আসছে পালাতে। বরিশাল আসার আগে মানিকগঞ্জ ছিল। বরিশাল এসে কাকাকে কল দিয়েছে, ‌ভাই আমি তো বরিশাল এসেছি একটা কাজে, ভোলা আসলে আপনাদের সাথে দেখা করবো। সেই হিসেবে গতকাল রাত কাকার বাসায় থাকার কথা। সেই কল ট্র্যাকিংয়ের রেকর্ডের সূত্র ধরেই ভোলায় আসে স্পেশাল টিম। তারা বাসায় না পেয়ে কাকা-কাকিকে নিয়ে যায় তাদের হেফাজতে যাতে ফাঁদ পেতে গ্রেপ্তার করা যায়।

রিহান জানান, সকাল থেকে কাকার নাম্বার থেকে কল দিলে হেফাজতি ক্রিমিনাল কল রিসিভ করে না। আমরা অপেক্ষা করতে ছিলাম কল রিসিভের। অবশেষে ১০ ঘটিকার সময় কল আসলো। কাকাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল- আমিতো অফিসের কাজে বরিশাল আসতেছি- আপনি কোথায় আমি দেখা করে তারপর একসাথে ভোলা আসবো। সে বললো- আমি নথুল্লাবাদ আছি আপনি আইসা কল দেন। দ্রুত ডিবি পুলিশের চার সদস্য এবং কাকাকে নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হই। মাইক্রোবাস, স্পিডবোটসহ দ্রুত যানে চলে যাই বরিশাল। তখন বেলা ১২টা। বরিশাল পেট্রোল পাম্প লোকেশন ঠিক করে তাকে কল দেই। তারপর পজিশন নিয়ে শুরু। অপেক্ষার পালা। যেহেতু কাকার বিয়ের বয়স দেড় বছর, সেহেতু এই নতুন আত্মীয়ের ছবি দেখলেও সামনাসামনি কখনও দেখা হয়নি কাকার সাথে। কাকাকে একটা দোকানে রেখে আমরা অবস্থান নিয়ে নেই। শেষ হলো অপেক্ষার প্রহর। আতাউল্লাহ রাস্তার ওপাশে আসলে কাকাকে সামনে পাঠিয়ে দেই। যখনই কাকার সাথে দেখা হলো, সাথে সাথে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলি। পুলিশ হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিকটবর্তী এয়ারপোর্টে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। যেহেতু কাকার সাথে কথোপকথন হয়েছে, সেহেতু আসামি শনাক্তকারী কাকা। তারপর তাদের অফিসিয়াল প্রসেসিং শেষ করে আমরা ফিরি ভোলার দিকে৷ তারা আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় মুন্সিগঞ্জের পথে। এভাবেই একটা সফল অভিযানের সমাপ্তি হয়। এজন্য স্যালুট জানাই আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে।

সরদার রিহান বলেন, হেফাজতের তাণ্ডবকারীরা ভারত কিংবা আমেরিকা থেকে আসেনি। এরা আমার আপনারই আত্মীয়। এদের প্রতি কোন সহানুভূতি না দেখিয়ে দেশ, দশ ও শান্তির ধর্ম ইসলামের স্বার্থে ধরিয়ে দিয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করুন।