মনপুরা নৌরুটে সরাসরি ফেরি চালুর দাবি

ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। এ উপজেলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও মনপুরার দেড় লাখ মানুষকে মূল ভূখণ্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন রাখাকে লজ্জাজনক উল্লেখ করে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে দেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলো।

ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, দ্বীপজেলা ভোলার একটি উপজেলা মনপুরা। এই উপজেলার সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নামও মনপুরা। সড়কপথে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপটির কোনো সংযোগ নেই। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা দ্বীপটির চারপাশেই মেঘনা। মনপুরা থেকে ভোলা সদর প্রায় ৮০ কিলোমিটার। জলপথে বৈধভাবে মনপুরা থেকে মূল ভূখণ্ডে আসার দুটি পথ। ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়া নৌপথ আর মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথ।

প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে মনপুরার যাতায়াতের করুণ দশা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়া নৌপথে তিন-চারটি লঞ্চ চলে। এই পথের প্রধান অসুবিধা অতিরিক্ত সময়। এই পথে মূল ভূখণ্ডে কোনো কাজ নিয়ে গিয়ে ওই দিনই দ্বীপে ফিরে আসা যায় না। কম করেও দুই দিনের মামলা। করোনার কারণে সেই পথও এখন বন্ধ। আর মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথে ঋতুভেদে কিছুদিন চলে লঞ্চ আর কিছুদিন সি-ট্রাক। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই এগুলো বিকল থাকে।

এই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছে প্রথম আলো। সম্পাদকীয়তে তারা বলছে ‘তাহলে মনপুরার লোকজন এখন মূল ভূখণ্ডে আসা-যাওয়া করছে কী করে? নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা–নেওয়া করছে কী করে? গুরুতর অসুস্থ রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে আনার দরকার হলে তারা কী করে?’

এসব প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছে তারা। বলছে, ‘‘ট্রলার আর স্পিডবোটই তাদের ভরসা। অথচ এই দুটি যানই অবৈধ। এগুলোই এখন মূল ভূখণ্ডে যাওয়া-আসার প্রধান বাহন। মাওয়া, আরিচা রুটের স্পিডবোট ব্যবহারকারীদের সঙ্গে মনপুরার ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। প্রথমোক্তরা বিকল্প ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এই ঝুঁকির রাস্তা বেছে নিচ্ছে, অন্যদিকে মনপুরাবাসী নিরুপায় হয়ে এসব যান ব্যবহার করছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা গেলে ঝুঁকির এই পথ পরিহার করা যেত।’’

এরপর খুব চমৎকার সুপারিশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো। সম্পাদকীয়তে তারা বলছে, ‘একটা ভালো বিকল্প হতে পারে ফেরি। অনেক দিন থেকেই মনপুরা-চরফ্যাশন নৌপথে একটি ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি করে আসছে উপজেলা প্রশাসন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার চিঠিও দিয়েছে তারা। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ফলে প্রতিদিন জীবন হাতে করে এসব যানবাহনে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করছে মনপুরাবাসী। শুধু যে যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে তা-ই নয়, অনুন্নত যোগাযোগের কারণে উপজেলা প্রশাসনের লোকজনও এখানে আসতে চায় না, বেশির ভাগ পদই থাকে শূন্য। অন্য আরেকটি দিক থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে মনপুরার মানুষজন। ভালো সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উন্নত যাতায়াতের অভাবে পর্যটনশিল্পের বিকাশ হচ্ছে না।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও মনপুরার মানুষকে বিচ্ছিন্ন রাখা লজ্জাজনক উল্লেখ করে প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘সব মিলিয়ে মনপুরায় একটি নিয়মিত ফেরি চালু করাটা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরও দেড় লাখ মানুষকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখাটা সত্যিই লজ্জাজনক।’